শাহেদ হোছাইন মুবিন : | বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪
জয়নাল আবেদীন প্রকাশ হাতকাটা জয়নাল, ঘের দখল করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের আঘাতে হাতের ৪ আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। তবুও থেমে ছিলোনা অপরাধ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অস্ত্র ও হত্যাচেষ্টসহ ৬টি মামলা। আকতার হোছাইনের অন্যতম সহযোগী সে।
মহেশখালীর এক সময়ের কুখ্যাত ও ভয়ংকর ডাকাত এই হাতকাটা জয়নাল। তৎকালীন সময়ে সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনাসহ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি, ডাকাতি ও মাছের ঘের দখল করতো। তার এই অপরাধ কর্মকান্ডের ফলে প্রতিপক্ষের সাথে সৃষ্ট সংঘর্ষে তার ডান হাত প্রতিপক্ষ কেটে ফেলে এবং সে থেকে হাতকাটা জয়নাল নামে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় চিংড়ি ঘের দখলের প্রস্তুতিকালে দুর্ধর্ষ অস্ত্রধারী ডাকাত আকতার হোসাইনসহ ৪ ডাকাত সদস্যকে আটকের পর এমন তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের দাবী, সম্প্রতি চিংড়ি ঘের দখল নিয়ে ৪ টি ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি। এর প্রেক্ষিতে অস্ত্রধারী একদল ডাকাত চিংড়ি ঘের ও লবণের মাঠ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবরে, মঙ্গলবার (২এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া মকবুলাবাদ এলাকার একটি ঘর থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানায় র্যাব।
আটককৃত ডাকাত সদস্যরা হলেন, মহেশখালী হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলী এলাকার কবির আহমেদের ছেলে আকতার হোসাইন (৪২),কালামারছড়া ইউনিয়নের মিজ্জির পাড়া এলাকার লস্কর আলীর ছেলে জয়নাল আবেদীন(৪২),নুনাছড়ি এলাকার আলী হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৩৮) ও কক্সবাজার সদর ভারুয়াখালী ইউনিয়নের উজির আলীর ছেলে নুরুল হামিদ(৩৯)।
মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, অস্ত্রধারী একদল ডাকাত চিংড়ি ঘের ও লবণের মাঠ দখলের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া মকবুলাবাদ এলাকার একটি ঘরে অবস্থান ও ঘের দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোররাতে অভিযানে যায় তারা।
র্যাবের অভিযানে বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ডাকাতদলের সদস্যরা। পরে তাদের ধাওয়া করে আটক করে র্যাব সদস্যরা। এসময় তাদের কাছে থাকা অস্ত্র এবং ঘরে মজুদ করা ৪টি লম্বা একনালা বন্দুক, ৯৮ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করে।ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি অটোরিকশাও জব্দ করে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা ডাকাতি এবং চিংড়ি ঘের দখল করার জন্য অস্ত্র মজুদের কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি র্যাবের।
আটককৃত চার ডাকাতের মধ্যে আরও ২ জনের বিষয়ে র্যাব পৃথক পৃথক তথ্য দিয়েছেন।
ডাকাত আকতার হোছাইনঃ
মহেশখালীসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ অবৈধভাবে দখলসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত আকতার। সে আধিপত্য বিস্তার ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ভাড়া করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে তার দলের শক্তি বৃদ্ধি করে। মহেশখালীসহ কক্সবাজারের চকরিয়া ও অন্যান্য এলাকা এবং কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থান হতে ভাড়া করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, সশস্ত্র সন্ত্রাসী/ডাকাত দলের সদস্যদের সে মহেশখালীতে নিয়ে আসতো। এছাড়াও ঘের দখলে তাদের শক্তি ও জনবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠতি বয়সী কিশোর/যুবকদের দলে অন্তর্ভূক্তকরণসহ তাদের হাতে তুলে দিতো অবৈধ অস্ত্র। অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তারা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে দেশীয় তৈরী অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ, চিংড়ি ঘের দখল ও ডাকাতির কাজে অস্ত্র-গোলাবারুদের ব্যবহার এবং নিজেদের হেফাজতে মজুদ করে থাকে। আরো জানা যায় যে, চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষ লাভজনক হওয়ায় দখলবাজ কিছু স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল তাদের ছত্র-ছায়ায় ঘের দখল-বেদখলে এ সকল সন্ত্রাসীদের তৈরীসহ শেল্টার দিয়ে থাকে। আকতারের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অস্ত্র আইনে ৩টি মামলা সংক্রান্তে তথ্য পাওয়া যায়।
ডাকাত নুরুল হামিদঃ
নুরিল হামিদ প্রকাশ খলিফা র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সে বিভিন্ন মাধ্যম হতে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করতো। সংগ্রহকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের নিকট বিক্রয়সহ চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ দখলকারী অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ করতো। একই সাথে সে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার নিকট অস্ত্র বিক্রয় করে বলে জানা যায়। এছাড়াও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব কৌশলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধীদের নিকট এই দেশীয় তৈরী অস্ত্র সরবরাহ করে আসছিল। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত নুরুল আমিন পেশায় সিএনজি চালক হলেও এই পেশার আড়ালে গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসীদের সহযোগী হিসেবে অস্ত্রশস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের আনা-নেয়ার কাজে সহায়তা করে থাকে।
Posted ৯:৫৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪
dbncox.com | Bijoy Kumar